বাংলাদেশের সুযোগসন্ধানী চতুর লোকেদের ভাব চক্কর অত্যন্ত বিরক্তিকর। এরা নিজেদেরকে উদার প্রগতিশীল দেখানোর জন্য বলদামি করে বেড়ায়। এরা বলে আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল, আওয়ামী লীগের অনেক অবদান, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কিভাবে দেশে জাতীয় ঐকমত্ত হবে।
আর আমরা যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বলছি তারা যেন দুনিয়ার সব ভুল করছি। আমরাতো বুঝিই না, কোনো আদর্শ নিষিদ্ধ করা যায় না। আমাদের মাথায় ঢোকে না, মূলতঃ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার করলেই হবে, দল নিষিদ্ধ করার দরকার নাই।
এবার বলি, সমসাময়ীক পোলাদের এই ভাব চক্কর কয়দিনের ? মানে কতদিন এসব বলার সুযোগ পাবেন ?
হ্যাঁ, আমি খোলাসা করে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার বলদ আর্গুমেন্টের মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় মাস। এর মধ্যে তিন মাস কেটে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী নেতাদের বিচার না করার কথাও সামনে আসবে। মানে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তার লোকদের বিচারি হবে না। এই বিচার হতে দেওয়া হবে না। রাজপথে এই বিচার প্রতিহত করা হবে।
এটি কিভাবে ঘটবে ?
প্রথম কথা হলো, ছাত্র-জনতার কাউকেই শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা নিজেরা গুলি করে মারেনি। মেরেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। গুলি করার অর্ডার দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটরা। এদের কারোরই বিচার হচ্ছে না, হবে না। সরাসরি খুনীদের বিচার না হলে হুকুমের আসামীদের বিচার হওয়ার প্রশ্ন নাই।
এরপর ধরেন শেখ হাসিনা একজন বয়স্ক নারী। তার বাপের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে আসিফ নজরুল স্যাররা যে স্বাধীনতা নিয়ে লাফালাফি করছেন সেই স্বাধীনতার কপিরাইট হাসিনার বাপের। ফলে এখানে শেখ হাসিনাকে জেল ফাঁসি দেওয়ার কিছু নাই। আর বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকতে গেলে সবাই মানুষ মারে, এজন্য অন্য কারো বিচার হয়নি, তাহলে শুধু শেখ হাসিনাকে বিচার করে একটা অস্থিতিশীলতা করার মানে হয় না।
হ্যাঁ, আওয়ামীলীগ দল হিসাবে আবারো মাঠে হাজির হলে এভাবেই আলাপ সামনে আসবে। তারা চার পাঁচটা প্রোগ্রাম করে হাসিনার বিচারের বিরোধিতা করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুধু আসিফ নজরুল স্যারই নয়, বরং ছাত্ররাও মা মা করে হাসিনাকে রক্ষায় মুখে ফেনা তুলে ফেলবে।
আপনাদেরকে একটা ফ্যাক্টস বলি। এত বড় ছাত্র- জনতার গণহত্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও কিন্তু নিহত হয়নি। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও কেউ তেমন বড় সংখ্যক ছাত্র মারা যায়নি।
এটা একাত্তরের মতোই ঘটনা। তখনও ২৫ মার্চ রাতে কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক সেনাবাহিনীর বলদামির কারণে নিহত হয়েছিল, এরমধ্যে জামায়াতের প্রফেসর মনিরুজ্জামান স্যারও ছিলেন। ২৫ মার্চ বাদ দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে ভর্তি কার্যক্রম চলেছে, ক্লাস পরীক্ষা হয়েছে, শিক্ষকরা বেতন তুলেছেন, ক্লাবে আড্ডা দিয়েছেন। কিন্তু একাত্তরের পর দেখুন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পৌরহিত্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে চলে এসেছে, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এর অমুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন আজাদ ও জাফর ইকবালরাই বড় চেতনাগুণ্ডাবীর হিসাবে সেলিব্রেশন পেয়েছে।
এখন তৃতীয় স্বাধীনতার কেরামতি বুঝতে হলেও একাত্তরের চেতনা ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকদের ভূমিকাকে মাথায় রাখতে হবে। ফলে আমরা সহজেই বুঝবো যে ফ্যাসিবাদের বিলোপ, গণহত্যাকারী হাসিনাদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা কোনো ইস্যু নয়। আসিফ নজরুল স্যাররা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, ছাত্ররা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, এটাই হলো আসল মটো, যেহেতু লালসা চরিতার্থ হয়েছে সেহেতু কিসের বিচার, কিসের বিলাপ।