রংপুর ব্যুরোঃ রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (২৬ অক্টোবর) তাদের রংপুর আগমন ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
পুলিশপ্রধানের সফরসঙ্গী হয়ে সারজিস-হাসনাতের এ সফরকে বাহিনীটির সঙ্গে জাপাকে সংঘাতে জড়ানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন দলের নেতারা। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও জরুরি সভা করেছেন। এ নিয়ে নগরজুড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
জাপাকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের নেতাকর্মীরা নিজ দুর্গখ্যাত রংপুরে তাদের দুজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। প্রশাসন সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে আনলে প্রতিহত করার ঘোষণাও দেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও সিটি করর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
শনিবার রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে যাবেন পুলিশের আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ রংপুর যাবেন। সকালে আইজিপির সঙ্গে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শাহাদত বরণকারী ও আহত বীরদের সম্মানে উৎসর্গীকৃত সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। এ লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় পার্টির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছিল তাদের রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার। আমি মুখপাত্র হিসেবে সেই ঘোষণা দিয়েছি। সারজিস ও হাসনাত আইজিপির প্রোগ্রামের ছত্র ছায়ায় রংপুরে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি যেন না হয়, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জাপার অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কেউ যেন এই ইস্যুতে বড় ধরনের ঘটনার জন্ম না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান। আমরা গঠনমূলক আন্দোলন করতে থাকব। আশা করছি, যেকোনো ঘটনা ফেস করার মতো শক্তি ও সক্ষমতা জাতীয় পার্টির রয়েছে। সভা শেষে জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ‘সারজিস তুই আসিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘রংপুরের মাটি, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’ নানা স্লোগান দেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জরুরি সভা করেছেন। সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ বলেন, জাতীয় পার্টির বিপরীতে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আগামীকালের প্রোগ্রাম নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা সেটি সবাইকে জানিয়ে দেব।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জাপার বিরুদ্ধে দুই সমন্বয়কের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচারের দোসর বলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
সে সময় তিনি বলেন, হাসনাত ও সার্জিস এত বড় মাপের নেতা হয়নি যে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ঘরে বসে চাইলে হবে না। তারপর তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় দলের আলোচনা সভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ‘টোকাই’ বলেছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তাদের রংপুরে কোনো কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টি অংশ গ্রহণ করতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মহানায়কদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এখতিয়ার কারও নেই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ এখনো প্রস্তুত আছে। রংপুর সিটি করর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। মোস্তাফিজার রহমান তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।