Monday , 2 December 2024
ব্রেকিং নিউজ
বাজেটের অর্ধেক টাকা যাচ্ছে ভোটারবান্ধব ১০ মন্ত্রণালয়ে

বাজেটের অর্ধেক টাকা যাচ্ছে ভোটারবান্ধব ১০ মন্ত্রণালয়ে

জাতীয় নির্বাচনের ৬ মাস আগে ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেট। ফলে ভোটার সম্পৃক্ততা বেশি এমন দশটি মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

নতুন বাজেটের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই রাখা হচ্ছে এ ১০ মন্ত্রণালয়ের জন্য। এবারের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৮১ কোটি টাকাই বরাদ্দ পাচ্ছে জনসম্পৃক্ত ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট দশটি মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে প্রতিরক্ষা খাত। সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ ২৯ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং তৃতীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি বলেছেন, বরাদ্দের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে স্থানীয় সরকার ও পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাত। বরাদ্দ ছাড়া বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে। তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেট নির্বাচনী বাজেট নয়। এটি একটি স্বাভাবিক বাজেট হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটের কাজ প্রায় শেষ। এ বছর বাজেটের মোট ব্যয়ের আকার হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সম্ভাব্য আয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৪৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০টি মন্ত্রণালয়কে। তবে এ শীর্ষ দশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ মন্ত্রণালয়গুলোর মিল নেই। কারণ ভোট বা জনগণ তুষ্ট হবেন এমন মন্ত্রণালয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। সূত্র মতে, চলতি বছরের তুলনায় ৩ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের বরাদ্দ বাড়ছে ৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা এবং তৃতীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বরাদ্দ বাড়ছে ৪ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

শীর্ষ বরাদ্দের দশ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এ বিভাগে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। চলতি বছরে বরাদ্দ আছে প্রায় ২৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এ বিভাগে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা। এ বছর শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে এমপিও ঘোষণা দেয়া হবে। কারণ এমপিও নিয়ে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তিতে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে রাজপথ থেকে শিক্ষকরা ফেরত গেছেন। যে কারণে সরকার বাজেটে এমপিও ঘোষণা দেবে। ফলে নতুন করে এমপিও ঘোষণার কারণে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। তবে এমপিও দেয়া হলে এক্ষেত্রে নানা ধরনের শর্ত থাকবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিভাগে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ১৮ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ওই হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সরকার সহযোগিতা হিসেবে ঋণ দিয়েছে বাজেটে। পরে তা ফেরত নেয়া হতো। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে ঋণ নয়, দেয়া হবে ভর্তুকি। যে কারণে এ বিভাগের ব্যয় বাড়বে।

এছাড়া শীর্ষ বরাদ্দের ষষ্ঠ তালিকায় আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আসন্ন বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৬৫ কোটি টাকা।

এদিকে নির্বাচনের বছরে জননিরাপত্তা বিভাগের ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এ বিভাগের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি থাকবে। যে কারণে নতুন বাজেটে জননিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা। বরাদ্দের সপ্তম অবস্থানে আছে জননিরাপত্তা বিভাগ। নতুন বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার ৩৩১ টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে প্রায় ১৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

শীর্ষ বরাদ্দের অষ্টম অবস্থানে আছে স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগ। এ বিভাগে নতুন বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগে সম্ভাব্য বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ বিভাগে বরাদ্দ আছে ১৬ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।

এদিকে বরাদ্দের শীর্ষে নবম অবস্থানে রেলপথ মন্ত্রণালয় থাকলেও আগামী অর্থবছরে এর বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। এটি কমছে চলতি বাজেটের তুলনায়। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রেল মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটে ১৩ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৩১১ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বরাদ্দ দেয়া কম ও বেশি নির্ভর করে চলতি বছরের ব্যয়ের সক্ষমতার ওপর। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যেগুলো বরাদ্দ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খরচ করতে পারেনি, তাদের আগামী বাজেটে কম টাকা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছে বা কাছাকাছি যেতে পেরেছে ওই সব মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নতুন কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বাড়বে। এসব হিসাব করেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, আগামী বাজেটে জনগণ যাতে সন্তুষ্ট থাকে সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে থাকছে পদক্ষেপ। বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিগত সময়ে যারা অর্থ ব্যয় ভালোভাবে করতে সক্ষম হয়েছে তাদের বেশি দেয়া হয়েছে।

About crimenews

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top